উত্তরের সৌন্দর্য উপভোগে যান নৈনিতাল || Nainital Tour
1 min read
উত্তরের সৌন্দর্য উপভোগে যান নৈনিতাল || Nainital Tour
উত্তরের সৌন্দর্য উপভোগে যান নৈনিতাল || Nainital Tour
উত্তরাখণ্ড, ভারতের উত্তর দিকে অবস্থিত এই ভূখণ্ডটি প্রাকৃতিক দৃশ্যের এক অভূতপূর্ব কোলাজ যার প্রতিটি শিরা-উপশিরায় বর্তমান অফুরন্ত মনোরম দৃশ্যপটের প্রাকৃতিক সম্ভার। আমাদের গন্তব্য কুমায়ুন হিমালয়ের নৈনিতাল।
কলকাতা থেকে বিমানে চড়ে সন্ধে নাগাদ দিল্লি পৌঁছলাম। পুরনো দিল্লি স্টেশন থেকে রাত্রি ১০টা নাগাদ রানিখেত এক্সপ্রেসে চেপে কাঠগোদাম যখন পৌঁছলাম তখন সেখানে ভোর রাত্রি। আগে থেকে ঠিক করে রাখা গাড়িতে চেপে শুরু হল আমাদের সৌন্দর্যযাত্রা, গন্তব্য নৈনিতাল। ভোরের আলোয় অন্ধকার যত কাটতে লাগল তত স্পষ্ট হতে লাগল চোখের সামনের অপরূপ প্রাকৃতিক সম্ভার। দেখলাম আঁকাবাঁকা পাহাড়িয়া পথ বেয়ে গাড়ি এগিয়ে চলেছে আর দু’পাশের জানলাগুলো যেন কোনও ক্যানভাস। আর প্রকৃতি যেন সেই ক্যানভাসে আপন মনের খেয়ালে সৃষ্টি করে চলেছে একের পর এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপট। আর আমরা তখন শুধু মাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ঘোরে বাঁধা পড়া মুগ্ধ দর্শক।

নৈনিতাল
কাঠগোদাম থেকে গাড়িতে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পৌঁছনো যায় নৈনিতাল। লেক সংলগ্ন হোটেলের ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দু’-চোখ ভরে দেখলাম সামনের নৈনি লেককে। প্রথমে আমরা গিয়েছিলাম সেখানকার জুলজিক্যাল পার্কে। পাহাড়ের গায়ে ধাপে ধাপে রাস্তা করে তৈরি করা হয়েছে এই চিড়িয়াখানাটি। বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী সম্বলিত এই চিড়িয়াখানাটি মন্দ নয়। পাহাড়ের বিভিন্ন ঢাল থেকে দৃশ্যমান নৈনি লেকের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করার পর চড়াই-উতরাই ভেঙে চিড়িয়াখানা দেখার ক্লান্তি যেন সহজেই দূর হয়ে যায়। এরপর গেলাম লেক সংলগ্ন বাজার চত্বরে। নিজেদের জন্যই হোক বা কারও জন্য উপহারস্বরূপই হোক কেনাকাটার জন্য বাজারটি বেশ ভাল। বলা বাহুল্য, নৈনিতাল নানা রকমের মোমের পুতুলের জন্য প্রসিদ্ধ। সে দিন সন্ধ্যায় হঠাৎ শুরু হল তীব্র শিলাবৃষ্টি। হোটেলে ডিনার করতে করতে ব্যালকনি দিয়ে দেখতে পাওয়া এই অপূর্ব দৃশ্য অবশ্যই এই ভ্রমণ অভিজ্ঞতার উপরি পাওনা।
পরের দিন নয়নাদেবীর মন্দির এ পুজো দিয়ে লেকে বোটিং। নৈনি লেক যে কতটা বিপুলাকার তার একটা ধারণা তো আগে থেকে ছিলই। কিন্তু বোটে না উঠলে তার প্রকৃত বিপুলাকৃতির সম্বন্ধে সঠিক ধারণাটাই হত না। ভাবতে অবাক লাগে, দু’পাশে পাহাড়ের মাঝে বিশাল ভূখণ্ড জুড়ে শুধু সবুজাভ জল আর জল। কথিত আছে সতীর মৃত্যুতে ক্রোধে উন্মত্ত মহাদেব যখন ধ্বংসলীলায় উদ্যত, তখন ভগবান শ্রীবিষ্ণু তাঁর সুদর্শন চক্রে টুকরো টুকরো করে দেন সতীর দেহ আর দেবীর নয়ন জোড়া এসে পড়ে এই ভূখণ্ডে। এবং তার ফলেই সৃষ্টি হয় নয়নাকৃতি এই বিশাল তাল। তাই এই তালের নাম নৈনিতাল ও পাশের নয়নাদেবীর মন্দিরও সেই সূত্রে গড়া। লেক সংলগ্ন রোপওয়ে স্টেশন থেকে রোপওয়েতে চড়ে পাহাড়ের ও নীচের লেকের দৃশ্য উপভোগ করা এখানকার আরও একটি আকর্ষণ। রোপওয়েতে চড়ে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে পৌঁছে সেখান থেকে দেখা যায় সুবিশাল হিমালয় পর্বতমালা। হাতে কিছুটা সময় থাকলে লেক সংলগ্ন ম্যাল রোড থেকে গাড়ি বুক করে ঘুরে আসতে পারেন নয়না পিক, টিফিন টপ, স্নো ভিউ পিক, ল্যান্ডস এন্ড, সাত তাল, অ্যানিম্যাল, পাখিরালয় প্রভৃতি।
কোথায় থাকবেন?
নৈনিতালে ম্যাল রোড সংলগ্ন অনেক হোটেল আছে। যেমন, দ্য নৈনি রিট্রিট, হোটেল কৃষ্ণ ইত্যাদি। এ ছাড়া কুমায়ুন মণ্ডল বিকাশ নিগমের (কেএমভিএন) ওয়েবসাইট থেকেও ঘর বুক করতে পারেন। মরসুমে ঘরভাড়া প্রায় ২৬০০ থেকে শুরু। আর অফ সিজনে ১৫০০ থেকে শুরু। আগে থেকে প্ল্যান করে বিভিন্ন অনলাইন বুকিং ওয়েবসাইটগুলিতে খেয়াল রাখলে, পেতে পারেন ভাল ডিল।
মনে রাখবেন, গাড়ি ও হোটেল বুকিংয়ের সময় সাম্প্রতিকতম দর জেনে নেবেন। মরসুম ভেদে এই দর ওঠানামা করে।