লোকসংস্কৃতির পীঠস্থান জয়দেব-কেঁদুলির মেলা থেকে
1 min read
জয়দেব-কেঁদুলির মেলা
লোকসংস্কৃতির পীঠস্থান জয়দেব-কেঁদুলির মেলা থেকে
পশ্চিমবঙ্গ সত্যিই বিচিত্র রাজ্য। এ রাজ্য যেন সারা দেশের এক টুকরো প্রতচ্ছবি। নদী থেকে পাহাড়, পাহাড় থেকে জঙ্গল, আবার জঙ্গল থেকে সমুদ্র; কি নেই এই রাজ্যে। আর বাঙালিদের তো বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর এই রাজ্যের বিভিন্ন মণীষীদের জন্মতিথি নিয়ে পালিত হয় বিভিন্ন উৎসব। কোথাও তাকে ঘিরে হয় বিভিন্ন বিচিত্রানুষ্ঠান আবার কোথাও অনুষ্ঠিত হয় মেলা। মেলা হল মিলনের উদ্দেশ্যে তৈরি এক উৎসব। কিন্তু মেলা যখন একটা জাতির প্রতিফলক হয়ে ওথে, তখন তা শুধু আর মেলা থাকে না, এটি হয়ে ওঠে একটি পার্বণ।

মকরসংক্রান্তি বা বাংলায় পৌষ সংক্রান্তির দিন পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার জয়দেব কেন্দুলিতে একটি মেলা হয়, যা জয়দেব কেন্দুলির মেলা নামে খ্যাত। এই মেলাকে ঘিরেই আজকের এই প্রতিবেদন। লোকশ্রুতি আছে যে দ্বাদশ শতকে কবি জয়দেব যিনি গীতগোবিন্দ কাব্যের রচয়িতা তিনি এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বলেই তার নামে এই গ্রামের নামকরণ।এই গ্রামে জয়দেব দ্বারা প্রতিষ্ঠিত রাধামাধবের মূর্তিটির পূজা করা হয়, এবং যেই আসনে বসে তিনি সিদ্ধি লাভ করেছিলেন সেই আসনটিকেও এখানে সংরক্ষিত আছে।
পৌষমেলার মতই কেঁদুলির মেলাতে বিভিন্ন বাউল এসে তাদের গান পরিবেশন করেন। এখন সরকারি উদ্যোগেও বাউল গান পরিবেশিত হয়। অন্যান্য মিলন মেলার মত এখানেও নানা দ্রব্য কেনাবেচা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন আখড়া থেকে অনেক বাউল এখানে আসেন, নিজেদের গানবাজনা শোনানোর জন্য। এখানে নানা বাদ্যযন্ত্র বিক্রির দোকানও বসে। তবে বাউল গান ছাড়াও এখানকার সব থেকে বিখ্যাত হল নাম সংকীর্তণ। গীতগোবিন্দের আদলে এখানে জয়দেবের বিভিন্ন পংক্তি নিয়ে এখানে মানুষ বা কীর্তনীয়ারা গান পরিবেশন করে থাকেন। সেই গান শুনতে হাজার হাজার মানুষ ও বৈষ্ণবীয়রা ভিড় জমান।
এবার কথা হল কিভাবে এই কেঁদুলীর মেলায় আপনারা যাবেন। শিয়ালদা থেকে অথবা হাওড়া থেকে বিভিন্ন ট্রেন আপনারা পেয়ে যাবেন। যথা- কবিগুরু এক্সপ্রেস, রামপুরহাট এক্সপ্রেস, শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস ইত্যাদি। এসি আর নন এসি দুইয়েরই ব্যবস্থা আছে। ট্রেনে করে বোলপুর অথবা প্রান্তিক স্টেশনে নেমে গাড়ি ভাড়া করে আপনাকে যেতে হবে জয়দেব কেঁদুলী গ্রামে। এই বছর কেঁদেলীর মেলা শুরু হবে ১৫ জানুয়ারি থেকে। তবে এইসময় কেঁদুলীর মেলা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ায় কিছুটা অপরিস্কার লাগবে সবকিছু। তবুও এর জনসমাগম দেখলে আপনার মন ভরে যাবেই তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কেঁদুলীর মেলা ছাড়াও এখানে আপনি দেখতে পারেন প্রাচীন টেরাকোটা মন্দির। বলা হয় এই মন্দিরেই কবি জয়দেব জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সমগ্র মন্দির জুড়ে রামায়ণ-মহাভারত এবং দেবতা বিষ্ণু বিষয়ক রেখাচিত্র টেরাকোটার মাধ্যমে অঙ্কণ করা হয়েছে।
পশ্চিমবাংলার মধ্যেই এই দুর্দান্ত ঐতিহাসিক নিদর্শন নিশ্চই মিস করতে চান না? শীতকালের ছুটি শেষ হবার পথে। তাই শেষমেশ চলেই যান কেঁদুলির মেলায়। ভাল থাকুন, আনন্দে থাকুন এবং ঘুরতে থাকুন…