পোঙ্গাল উৎসব
1 min read
পোঙ্গাল উৎসবঃ
পোঙ্গাল উৎসব
ভারতের সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন উৎসব। জাতি ধর্ম ভুলে এইসব উৎসবে সামিল হয় লক্ষ লক্ষ মানুষ। আবার বৈচিত্রের দেশ ভারতে স্থানভেদে উৎসবের নাম হয় আলাদা আলাদা। আলাদা আলাদা নাম হলেও সেই সব পার্বণের ধারা যেন মিলেমিশে একাকার। সব জায়গায় তা পালিত হয় একইপ্রকারে, কিন্তু নিয়ম কিছুটা ভিন্ন ভিন্ন

তেমনি একটি পার্বণ হল পোঙ্গাল উৎসব। এটি যেমন পাঞ্জাবে লোহড়ি নামে বিখ্যাত, তেমনই এটি আসামে পরিচিত বিহু নামে। সারা দেশে অবশ্য এটি পালিত হয় মকরসংক্রান্তি নামে। পোঙ্গাল উৎসবটি তামিলনাড়ুতে পালিত হয়। ভারত একটি কৃষিপ্রধান দেশ। তাই এই কৃষিকাজকে নিয়ে উৎসব প্রচলিত থাকবে এই দেশে তাতে আর আশ্চর্যের কি আছে! নতুন ধান গোলায় ওঠানোকেই পোঙ্গাল বলে। পোঙ্গাল শব্দের তামিল ভাষায় অর্থ হল নতুন ধান রন্ধন। এইদিন নতুন ধান রান্না করে সূর্যদেবের কাছে ভোগ নিবেদন করে পূজা করাই এই পার্বণের রীতি।
পোঙ্গাল চার দিনের উৎসব। প্রথমদিনকে বলা হয় ভোগী পোঙ্গাল। এইদিন পরিবারের লোকজনের সাথে ঋতুরাজ ইন্দ্রের পূজা করা হয়। এছাড়াও এইদিন বাড়িঘর পরিষ্কার করা হয়, সব আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলা হয়, বাড়ির সামনে চালের গুঁড়ো দিয়ে আলপনা আঁকা হয়। পালিত গোরুকে ফুল দিয়ে সাজিয়ে পুজো করা হয় , একইসাথে নতুন জামাকাপড়ও পরাকে এইদিন শুভ বলে মনে করা হয়।
পরের দিনকে বলে সূর্য পোঙ্গাল। এর অন্য নাম সুরিয়ান পোঙ্গাল বা পেরুম পোঙ্গাল। এইদিনই মূল পার্বণ অনুষ্ঠিত হয়। এইদিন সূর্যপূজা করা হয়, একইসাথে সূর্য পোঙ্গালের দিনই তামিল মাস টাই-এর প্রথম দিন। সারাদেশে এইদিনটি মকরসংক্রান্তি বা উত্তরায়ণ নামে বিখ্যাত। এইদিন খোলা জায়গায় সূর্যের আলোয় একটি মাটির পাত্রে নতুন একটি রান্না করা হয়, পাত্রটিতে হলুদ গাছ বাঁধা থাকে এবং মালা পরানো থাকে। এবং উনুনের পাশে রাখা থাকে দুই বা তার অধিক ইক্ষু গাছ। নিশ্চই ইচ্ছে করছে পোঙ্গালে কি রান্না করা হয় জানার জন্য। এইদিন দুধ চাপানো হয় মাটির পাত্রে, সেটিকে ফোটানো হয় ভাল করে। যখনই সেটি ফুটতে শুরু করে তখন তার মধ্যে নতুন চাল এবং গুঁড় দিয়ে দেওয়া হয়। তারপর দুধ উথলানো দেখে সবাই, এই দুধ উথলানো দেখাকে শুভ বলে মনে করা হয়। এইসময় গ্রামীণ মহিলারা তাদের প্রচলিত গান গায় শুভ সময়কে আহ্বান করে। এবং সারা বাড়ি সাজানো হয় কলাপাতা এবং আম পাতা দিয়ে।
সূর্য পোঙ্গালের পরের দিন পালন করা মাট্টু পোঙ্গাল হিসেবে। মাট্টু শব্দের অর্থ হল ষাঁড়। ষাঁড় বা গোরুকে সমৃদ্ধির ধারক ও বাহক বলে মনে করা হয়। এইদিন পালিত ষাঁড় এবং গোরুকে সাজানো হয় মালা দিয়ে, শিংকে বিভিন্ন রঙ দিয়ে আঁকা হয়। এইদিন বিভিন্ন অঞ্চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দ্বারা পার্বণ পালন করা হয়।
চতুর্থ দিনের নাম কানুম পোঙ্গাল বা কন্যা পোঙ্গাল। চতুর্থ দিনই পোঙ্গালের শেষ দিন। এইদিন পারিবারিক পুনর্মিলনের মাধ্যমে এবং একসাথে আখ গাছ কাটার মাধ্যমে দিনটিকে উদ্যাপন করা হয়।
পোঙ্গাল উৎসবের জন্য তামিলনাড়ুর বিভিন্ন জায়গায় নানা মেলা বসে। সেখানে বিক্রী করা হয় ঐতিহ্যবাহী শাড়ি, গয়না, মাটির পাত্র ইত্যাদি।
এই সব তথ্য পেয়ে নিশ্চই আপনার পোঙ্গাল উৎসবের ভাগীদার হতে ইচ্ছে করছে? চিন্তা নেই, এখানেই দিয়ে দেওয়া হচ্ছে তামিলনাড়ু ভ্রমণের বিস্তারিত তথ্যঃ
বিমানের মাধ্যমে যাত্রা করলে আপনারা তিন দিক দিয়ে যেতে পারেন, যথা- মাদ্রাজ, কোয়েম্বাটোর এবং তিরুচিরাপল্লী। ট্রেনে যেতে চাইলে তিরুবনন্তপুরম বা চেন্নাই সেন্ট্রালের ট্রেন ধরতে পারেন হাওড়া থেকে। সময় লাগবে একদিনের কিছুটা বেশি। পোঙ্গাল উৎসবের জন্য এইসময় হোটেলের ভাড়া কিছুটা বেশি থাকে। তাই তিন মাস আগে থেকে বুকিং করলে সুবিধা হবে। এছাড়াও সরকারি কিছু হলিডে হোমও রয়েছে, সেগুলিও কলকাতার থেকে বুক করতে পারবেন।
এই বছরের ১৫ জানুয়ারি পোঙ্গাল উৎসব পালিত হবে। সব তথ্য পড়ার পর নিশ্চই ভাবছেন পোঙ্গালের দিন একছুটে চলে যেতে তামিল নাড়ুতে? তাহলে আর দেরী কেন… ঘুরে আসুন তামিল নাড়ু আর উদ্যাপন করুন পোঙ্গাল উৎসব!!!