চলুন ঘুরে আসি পর্তুগিজদের বৃহত্তম শহর গোয়া থেকে
1 min read
GOA
গোয়া
শুধু ভারতীয়রাই বিদেশে পরিভ্রমণ করে না। বিদেশীদেরও নিত্য যাতায়াত এই ভারতবর্ষে। এই দেশের প্রাচীনত্ব যেমন দেখার বিষয়, তেমনই এর ভৌগলিক রূপও পর্যটকদের সহজেই টেনে আনে ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন গুলিতে। আর ভারতের মত বিচিত্র ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য আর কোনও এশিয়ার দেশে বরং বলা ভালো সমগ্র বিশ্বে আছে কিনা সন্দেহ। এমন ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের দেশ ভারতে বসবাসকারী মানুষও বড় বিচিত্র, আর তাদের বিচিত্র সব অভ্যাস। কেউ শান্ত জায়গায় বসে থাকতে পছন্দ করে কেউ বা রাত্রের পার্টি লাভার। কেউ উইকেন্ডে বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসে, আর কেউ উইকেন্ডে সোলো ট্রিপ করে সুখ খোঁজে। এই সব চাহিদার জন্য আমাদের ট্যুরিস্ট ডেস্টেশনগুলির বাড় বাড়ন্ত, সেগুলিও সেজে ওঠে মানুষের বিচিত্র স্বভাবে মত বিচিত্র সব রূপে।

সোলো ট্রিপ হোক আর গ্রুপ মিট, দেশি পর্যটক হোক বা ফরেনার ট্র্যাভেলার প্রত্যেকেরই ভারতে একটাই ডেস্টিনেশন, তা হল গোয়া। হ্যাঁ, গোয়া জায়গাটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। গোয়ায় যেতে চায়না এমন মানুষও বিরল। এর অপূর্ব সমুদ্র তট বা কয়েকশ’ বছরের পুরনো পোর্তুগিজদের স্থাপত্য- এই সবই গোয়ার অন্যতম আকর্ষণ। গোয়া আয়তনের হিসাবে ভারতের ক্ষুদ্রতম এবং জনসংখ্যার হিসেবে ভারতের চতুর্থ ক্ষুদ্রতম অঙ্গরাজ্য। এটি ভারতের পশ্চিম উপকূলে কোঙ্কণ নামের অঞ্চলে অবস্থিত।

গোয়ার উত্তরে মহারাষ্ট্র, পূর্ব ও দক্ষিণে কর্ণাটক এবং পশ্চিমে আরব সাগর। গোয়ার রাজধানীর নাম পণজী। ভাস্কো দা গামা এর বৃহত্তম শহর। ঐতিহাসিক মারগাউ শহরে আজও পর্তুগিজ সংস্কৃতির প্রভাব দেখা যায়। ১৬শ শতকের শুরুতে পর্তুগিজ নাবিকেরা প্রথমে গোয়াতে অবতরণ করে এবং দ্রুত এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। পর্তুগিজদের এই বহিঃসামুদ্রিক অঞ্চলটি প্রায় ৪৫০ বছর টিকে ছিল। ১৯৬১ সালে ভারত সরকার এটিকে ভারতের অংশ করে নেয়। গোয়া রাজ্যে দুটি জেলা আছে। এক, উত্তর গোয়া দুই, দক্ষিণ গোয়া।

গোয়ায় যেকোনও সময়েই ঘুরতে যেতে পারেন। তবে বর্ষার সময় না যাওয়াই ভালো। ক্রিসমাসের জন্য অন্যদিকে গোয়া সেজে ওঠে একেবারে নতুন লুকে, এই উৎসব চলে পুরো জানুয়ারি মাস পর্যন্ত। এই সময় যাতায়াত বা হোটেল এই দুইয়েরই রেট বাড়ে, ফলে এই সময় টা না যাওয়াই শ্রেয়, যদি বাজেট কম থাকে। কলকাতা থেকে সোজা গোয়ায় যেতে চাইলে অমরাবতী এক্সপ্রেস ধরতে পারেন। নাহলে ব্রেক জার্নি করে পুনে বা মুম্বাই থেকেও গোয়ায় যেতে পারেন। একটু আগে থেকে টিকিট কাটলে অবশ্য বিমানের ভাড়া সস্তায় হয়ে যায়, কারণ ট্রেনে অনেকটা সময় লেগে যায়। উত্তর গোয়ায় দর্শনীয় স্থানের মধ্যে সমুদ্র সৈকত প্রধান এবং অন্যতম। বন্ধুদের সাথে বেড়াতে গেলে উত্তর গোয়া অত্যন্ত উপভোগ্য। কারণ সেখানে থাকা বিভিন্ন নাইট পার্টিতে আপনারা জয়েন করতে পারবেন বিনা মূল্যেই, এছাড়া ওয়ি জায়গা বিশাল ভাবে জনবহুল। তবে সোলো ট্রিপ বা পারিবারিক ভ্রমণের জন্য দক্ষিণ গোয়াই ভালো, কারণ সেটি একটু বেশিই নির্জন অন্য জায়গার থেকে। সমুদ্র তট ছাড়াও গোয়ায় দেখার অনেক কিছুই রয়েছে।

উত্তর গোয়ায় থাকার জন্য কালানগুটে খুবই সুন্দর। খরচ কিছুটা বেশি হওয়া সত্বেও। সেখানে হোটেল ভাড়া নিইয়ে ঘুরে দেখব ফোর্ট আগুয়াডা। পোর্তুগিজ শাসনের সময় তৈরি এই ফোর্ট গোয়ার একটি দর্শনীয় স্থান। এবার পরপর দেখে নেব কয়েকটা বিচ। যেমন, ভাগাতোর বিচ, আনজুনা বিচ, বাগা বিচ এবং অবশ্যই কালানগুটে বিচ। এই উত্তর গোয়ার আরেক আকর্ষণ দুধসাগর জলপ্রপাত। এটি আপনারা এইদিনই দেখে নিতে পারেন। এরপর আসা যাক দক্ষিণ গোয়ায়। দক্ষিণ গোয়ার অন্যতম আকর্ষণ কোলভা। এছারা আছে সান্তাদুর্গা মন্দির, সে ক্যাথিড্রাল চার্চ, বাসিলিকা দে বম জেসাস। এই চার্চটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত। এখানকার জনপ্রিয় ফলের রস কোকন জ্যুস খেতে ভুলবন না। দেখে নিতে পারেন নিরিবিলি কিন্তু দুর্দান্ত সুন্দর বেনলিম বিচ। এছাড়া দেখতে পারেন পালোলেম বিচ, হানিমুন আইল্যান্ড। তবে এখানকার মূল আকর্ষণ ডোনা পাওলা। এখানে আপনারা ওয়াটার স্কুটারও চড়ে নিতে পারেন।

উত্তর গোয়া এবং দক্ষিণ গোয়ায় প্রতিটি ট্যুরের জন্য আনুমাণিক খরচ সাড়ে তিনশ’ থেকে পাঁচশ টাকা মাথা পিছু। এখানকার খাবারের দাম বেশি। যদি পরিবার নিয়ে যান তবে রান্নাঘর সমেত সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করলে খরচ কিছুটা হলেও কমবে। একতু সমঝে চললে সম্পূর্ণ যাত্রায় মাথাপিছু খরচ পড়ে যাবে সাত থেকে আট হাজার টাকা।

গোয়ায় যাওয়ার ইচ্ছে কার না থাকে বলুন। তাহলে আর দেরি কেন, এবার বেরিয়েই পড়ুন ভারতের মায়া রাজ্য গোয়া পরিভ্রমণ করতে।