এই উইকেন্ডেই ঘুরে আসুন জঙ্গলমহল থেকে
1 min read
jangalmahal
জঙ্গলমহল
মানুষের হাতে বরাবরই সময় কম। তার উপর এই ব্যস্ত যুগে সবাই খুব ব্যস্ত তাদের কাজবাজ নিয়ে। কেউ পড়াশোনায় ব্যস্ত আবার কেউ তার চাকরি নিয়ে। এই কর্মব্যস্ততার যুগে মানুষের বিনোদনের সুযোগও কিছু কম নয় কিন্তু। তবে তার এই বিনোদনের কম সুযোগ না থাকলেও মানুষের বিনোদন লাভ করার সু্যোগ খুব কম। আর বাঙালিরা বরাবরই হুজুগে। তাই তো কথায় আছে, ‘উঠলো বাই তো কটক যাই’। মানুষ হুটাহাট করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে তার মনোরঞ্জনের জন্য। আর যদি ছুটি টুটি পায় একবার বাঙালি, তো সোনায় সোহাগা। অমনি তারা বেরিয়ে পড়ে কাছে পিঠে ভ্রমণের তাগিদে। এই ভ্রমণের তাগিদ কিন্তু কম নয়। অচেনা কে দেখার অজানাকে জানার মানুষের এই চরম ইচ্ছে তাকে দৌড় করিয়ে বেড়ায় ভ্রমণের জন্য। আজ তেমনই এক ঝটিতি সফরের প্ল্যান নয়ে আসলাম আপনাদের কাছে।

আজকের ভ্রমণ হবে জঙ্গলমহলে। জঙ্গলমহল হল পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ঝাড়গ্রাম ও ছোটনাগপুর মালভূমির বন ও পর্বতময় অংশটির নাম। অষ্টাদশ শতাব্দীতে এই অঞ্চল ব্রিটিশ শাসনাধীনে আসার পর এই অঞ্চলের এমন নাম হয়। সে যুগে জঙ্গল তরাই নামে পরিচিত এই অঞ্চলে এই জেলা অবস্থিত ছিল। এই অঞ্চল সে যুগে সম্পূর্ণ বন এবং সাঁওতাল পরিবেষ্টিত ছিল। এই স্থান উইকেন্ড ট্রিপের জন্য আদর্শ ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন। মূলত জঙ্গলমহল ভ্রমণ বলতে ঝাড়গ্রাম এবং বেলপাহাড়ি ভ্রমণই বোঝায়। কলকাতা থেকে ঝাড়গ্রাম পৌঁছনোর মোট সাতটি ট্রেন আছে, এগুলি হল- ইস্পাত এক্সপ্রেস, স্টিল এক্সপ্রেস, ক্রিয়া যোগা এক্সপ্রেস, হাওড়া কোরাপুট এক্সপ্রেস, হাওড়া রাঁচি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস ইত্যাদি। ঝাড়গ্রাম যেতে ইস্পাত এক্সপ্রেসে সময় লাগে দু’ঘণ্টা চোদ্দ মিনিট মতন। আপনারা গাড়িতে করেও ঝাড়গ্রাম যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে হাতে বাজেট একটু বেশি ধরতে হবে। ঝাড়গ্রাম পৌঁছেই আপনারা যেতে পারেন ঝাড়গ্রাম প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র বা ইকো ট্যুরিজম সেন্টারে। শালের জঙ্গলের মাঝে সাজানো গোছানো এক অপার্থিব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝখানে ভেসে যেতে আপনাদের মন্দ লাগবে না। এছাড়া রয়েছে ট্রাইবাল ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার। এখানেই থাকার জন্য রয়েছে সুন্দর কটেজ। এর পরেই আপনারা যেতে পারেন ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি দেখতে। ১৯৩১ সালে এটি ইউরোপীয় ও ইসলামিক রীতি মেনে নতুন করে নির্মাণ করা হয়। রাজবাড়িতে থাকা গেস্ট হাউজেও আপনারা রাত্রিবাস করতে পারেন। দুপুরের লাঞ্চ সেরে আপনারা সাইট সিনের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়তে পারেন। দেখতে পারেন কনকদূর্গা মন্দির। সেখানে থাকা ফোয়ারা, পুরনো ভগ্নপ্রায় মন্দির দেখলে আপনারা নস্টালজিক হয়ে পড়বেন। এরপর যেতে পারেন ডুলুং নদীর তীরে, চিলকিগড় রাজবাড়িতে। এরপর আপনারা দেখতে পারেন ঝাড়গ্রাম মিনি জু। পরের দিন ঘুরতে যেতে পারেন বেলপাহাড়ি। বেলপাহারিতে বেশ কিছু ঘোরার জায়গা রয়েছে। যেমন- ঘাগড়া জলপ্রপাত, গাড্রাশ্রেণি পাহাড়, গাড্রাশ্রেণি পাহারের উপরে রয়েছে একটি মন্দির। পাথুরে পথ বেয়ে পাহাড়ে উঠলে উপর থেকে জঙ্গলের ভিউ আপনাদের নজর কাড়বেই। এরপর দেখতে পারেন খান্দারিনি লেক। চারপাশে রুক্ষ শাল গাছের জঙ্গল আর পাহাড়, মাঝখানে এই লেক। শীতকালে দেখতে পাবেন এখানে পরিযায়ী পাখিদের ভিড়। এরপর দেখতে পারেন লালজল গুহা। পাহাড়ের উপরে গুহা আর তার উপর মন্দির। এরপরে ঘুরে দেখতে পারেন ময়ূর ঝরনা জঙ্গল। পুরো পথটাই জঙ্গলের ভিতর দিয়ে। জনপ্রতি আড়াই থকে তিন হাজার টাকার মধ্যে আপনারা সম্পূর্ণ ঘোরাটি সম্পন্ন করতে পারেন।
তাহলে আর দেরী কেন, এই উইকেন্ডেই ঘুরে আসুন জঙ্গলমহল থেকে…।